তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে গবাদী পশু নিয়ে পানিবন্দী মানুষেরা বিপাকে।

0

 

তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে গবাদী পশু নিয়ে পানিবন্দী মানুষেরা বিপাকে।

রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর ।

উজানের পাহাড়ী ঢলে ভাসছে তিস্তা নদীর তীরবর্তী মানুষ। নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। গবাদী পশু নিয়ে পানিবন্দী মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। অনেক স্থানে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় পানিবন্দী পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করেছে প্রশাসন।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভারতে ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টির কারণে উজানের পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয় প্রবাহিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধিতে গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডোহরা, মিনার বাজার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনার চর, মটুকপুর, চিলাখাল, লহ্মীটারী ইউনিয়নের ইচলী, শংকরদহ, বাগেরহাট, জয়রামওঝা, গজঘন্টা ইউনিয়নের রাজবল্লভ, চর ছালাপাক, মর্ণেয়া ইউনিয়নের নরসিংহ, চর মর্ণেয়া,
এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহ, ইচলী, গজঘন্টা ইউনিয়নের চর ছালাপাক সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। কোথাও গলা সমান, কোথাও কোমড়, কোথাও বা হাঁটু পানি হয়েছে। বন্যার কারণে কৃষকদের পাট, মরিচ, বাদামের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে কলা গাছের ভেলা ও ডিঙ্গি নৌকায় করে যাতায়াত করছেন।
চর ছালাপাকের কৃষক সুজা মিয়া বলেন, নদীর পানি কয়েক দিন ধরি বাড়তোছে, আবার কমতোছে। কাইল আইত (রাত) থ্যাকি তিস্তা নদীর পানি বেশি বাড়ছে। রাইতোত ক্ষেতগুলা পানিত ডুবি গেইছে। আইজ আস্তাসুদ্দা ডুবি গেইছে। হামরা এ্যালা পানির মাঝোত গরু-ছাগল নিয়া আটকা পড়ি আছি। শুনতোছি পানি নাকি আরও বাড়বে। পানি আরও বাড়লে বাড়িত থাকা যাবার ন্যায়।
একই এলাকার কৃষক শাহিন আলম বলেন, প্রত্যেকবারে পানি বাড়লে হামার ম্যালা কষ্ট হয়। ঘর-দুয়ার সউগ ডুবি যায়। আবাদী জমি, গরু-ছাগল নদীত ভাসি যায়। এইবারও পানির জোর তেমন দেখতোছি। এই সমস্যা থ্যাকি হামরা কবে মুক্তি পামো জানি না।
শংকরদহের মোসলেমা বেগম বলেন, পানিত থ্যাকি ছোট ছোট ছাওয়া নিয়া আন্দাবাড়ি করা নাগে। এর মাঝোত ছোট ছাওয়াগুলা খালি পানিত নামবার চায়, সাপেরও ভয় থাকে। মহিলা মানুষের ম্যালা কষ্ট।
লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, আমার ইউনিয়নে ১৫’শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তিস্তার তীব্র স্রোতে ২০টি ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থরা বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন পানিবন্দী কিছু পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, লহ্মীটারী ইউনিয়নের বাগেরহাট আশ্রয়ণ, চর শংকরদহ ও ইচলী এলাকার পানিবন্দী মানুষদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চাহিদা মত অন্য এলাকায় সরকারী ত্রাণ পৌঁছানো হবে। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। এছাড়া বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। বন্যার স্থায়ীত্ব বেশি হলে মানুষদের ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বোটের মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে । সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর পানি মধ্যরাত নাগাদ আরও বাড়তে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed