রংপুরে শিশু অপহরণ ধর্ষণ ও পতিতালয়ে বিক্রির মামলায় দুজনের যাবজ্জীবন।

রিয়াজুল হক সাগর,রংপুর ।

রংপুরে শিশু অপহরণের পর ধর্ষণ ও পতিতালয়ে বিক্রির মামলায় দুজনের যাবজ্জীবন ও একজনের ৮ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। সোমবার (৮ মে) দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মোঃ রোকনুজ্জামান এ রায় প্রদান করেন। দন্ডপ্রাপ্তরা হলো, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ইয়াছমিন, রংপুর গঙ্গাচড়া উপজেলার লালচাঁদপুর গ্রামের জব্বার শেখের ছেলে আব্দুল ওহিদ ও বদরগঞ্জ উপজেলার চান্দেরডাঙ্গা গ্রামের এন্তাজুল হকের মেয়ে তারা মনি। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা না থাকায় অপর আসামী মানিক মিয়াকে খালাশ দিয়েছে আদালত। রায় ঘোষণার সময় আদালতে ইয়াছমিন, তারা মনি ও মানিক মিয়া উপস্থিত থাকলেও ওহিদ পলাতক রয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের পিপি জাহাঙ্গীর আলম তুহিন।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর সকালে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে ওই ছাত্রী বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর সে স্কুল ছুটির পর বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে। ওই ছাত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বাবা বদরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। এরই মধ্যে স্থানীয় ভ্যান চালক আল আমিনের মাধ্যমে জানতে পারে প্রতিবেশী এন্তাজুলের মেয়ে তারামনির সাথে তার মেয়ে বদরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াগঞ্জ গিয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে জানালে বদরগঞ্জ থানা পুলিশ নিখোঁজ ওই ছাত্রীকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে এবং কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কমল মোহন চাকী ২০১৬ সালের ১০ মার্চ আদালতে চার্জশীট দেন। ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-প্রমানের ভিত্তিতে সোমবার আদালতের বিচারক আসামী ইয়াসমিনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, ধর্ষণের ঘটনায় আব্দুল ওহিদকে দুটি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও দুই লক্ষ টাকা জরিমানা এবং তারা মনি শিশু হওয়ায় তাকে ৮ বছরের আটকাদেশ দেন।
রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের পিপি জাহাঙ্গীর আলম তুহিন বলেন, স্কুলের বান্ধবী তারামনি ওই ছাত্রীকে ফুসলিয়ে ওহিদের কাছে তুলে দেয়। ওহিদ ওই ছাত্রীকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে রেলস্টেশন এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে ধর্ষণ করে এবং মামলার আসামী ইয়াসমিনের কাছে বিক্রি করে দেয়। ইয়াসমিন ওই ছাত্রীকে কিশোরগঞ্জ ভৈরব এলাকার একটি পতিতালয়ে থাকতে বাধ্য করে। এর কিছুদিন পর ইয়াসমিন ওই ছাত্রীকে অন্য জায়গায় বিক্রির চেষ্টা করলে কৌশলে ওই ছাত্রী পালিয়ে যায়। বাসযাত্রী এক নারীকে ওই ছাত্রী পুরো বিষয়টি খুলে বলে। পরে ওই নারী পুলিশকে বিষয়টি জানালে পুলিশ ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। এ মামলায় দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও একজন শিশু হওয়ায় তাকে ৮ বছরের আটকাদেশ দিয়েছে আদালত। আমরা রায়ে সন্তুষ্ট হলেও মামলার আসামী মানিককে অব্যহতি দেয়ায় তার বিরুদ্ধ উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed