কিশোরগঞ্জে স্কুলের মাঠে ১৪ বছর ধরে গরুর হাট।

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ

স্কুলের মাঠে ১৪ বছর ধরে গরুর হাট। পর্দা দিয়ে গরু হাট বসানোর নির্দেশ ইউএনওর।

কিশোরগঞ্জের নিকলীর আঠারবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গরুর হাট।
মাঠে কোন জায়গা কোন ফাঁকা জায়গা নেই। খুঁটিতে বাঁধা শত শত গরু। এমনকি চলার রাস্তা ও তার আশপাশের এলোপাথাড়িভাবে দাঁড়িয়ে কেনাবেচা হচ্ছে এই গরু। রয়েছে হাজারো মানুষের কোলাহল।
কিশোরগঞ্জের নিকলী-বাজিতপুর সড়কের পাশে আঠারবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের সপ্তাহের প্রতি বুধবারের চিত্র এটি।

হাটের কারণে বুধবার স্কুলটি নামমাত্র খোলা থাকে। এদিন শিক্ষকরা এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন ঠিকই তবে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী স্কুলে এলেও বেশির ভাগই আসে না। এসব কারণে স্কুলের পড়ালেখা লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানায়।

২০০৯ সালে নিকলীর জারইতলা ইউনিয়নের সাজনপুর গোপীরায়ের বাজারের কাছের এ মাঠটিকে ঘিরেই গরুর হাট গড়ে ওঠে। গত ১৪ বছরে কিশোরগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাটে পরিণত হয়েছে হাটটি।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) সুব্রত কুমার বণিক বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, স্কুলের মাঠে টানা ১৪ বছর গরুর হাট থাকা অসম্ভব ব্যাপার। এর আগে ঘটনাটি তাঁকে কেউ অবহিত করেনি।

নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শাকিলা পারভীন জানান, বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনার প্রতিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও জানান, তিনি মাঠের মাঝ বরাবর আড়াল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের একপাশে স্কুলের দেয়াল ঘেঁষে জারইতলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণে নীল রঙের পাতলা কাপড়ের পর্দা টানানো আছে। কিন্তু মূল তোরণসহ স্কুলে প্রবেশের সব কয়টি রাস্তায় গরু ও হাটে আসা মানুষের ভিড়। যে কারণে কাপড়ের পর্দা তেমন কাজে আসছে না।

শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের মাঠজুড়ে গরু-ছাগলের চনা-বিষ্ঠার দুর্গন্ধে টেকা যায় না। পরদিন বৃহস্পতিবারও স্কুলের মাঠ স্যাঁতসেঁতে থাকে। ফলে ওই দিনও শিক্ষার্থী কম আসে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তাই তারা সপ্তাহে মাত্র তিন দিন স্বস্তিতে স্কুলে যেত পারে। বর্ষাকালে সপ্তাহজুড়েই মাঠটি নোংরা পুঁতিগন্ধময় থাকে।

আঠারবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আওয়াল সবুজ জানান, গরুর হাটের দিন বুধবার ছাত্র-ছাত্রী খুব কম আসে। যারা আসে, দুপুর ১২টার আগেই চলে যায়। পরদিন বৃহস্পতিবারও দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়ে। স্কুলে এখন আর কোনো ভালো শিক্ষার্থী নেই বলেও জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, এই গরুর হাটের লাভের দিক চিন্তা করিয়া শিক্ষার ১২ টা বাজিয়ে দিতেছে। এক সাংবাদিক উচিত কথা কইতে গিয়ে উল্টা সে বিপদে পড়েছে। জীবন নিয়ে ফালাইয়া বেড়াইতেছে আর আমরা তাদের বিরুদ্ধে কিছু কইলে বিপদের শেষ নাই।
একই এলাকার একাধিক ইউপি সদস্য বলেন, গরুর হাটের অনিয়ম আর সমস্যার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা কিছু কথা বলে, অপমানিত হয়েই। তাই এ বিষয়ে আর বলছে চাই না।

নিকলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুল হক লিটন বলেন, ‘হাটের কারণে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। হাটের ফান্ডের টাকায় হাটের জন্য স্থায়ী মাঠ নির্মাণ করা দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed