রংপুরে সাংবাদিকদের উপর হামলা মামলার প্রতিকার বিষয়ে পুলিশ কমিশনারের সাথে সাংবাদিক নেতাদের বৈঠক।

রিয়াজুল হক সাগর,রংপুর ।

রংপুরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা মামলার প্রতিকার বিষয়ে পুলিশ কমিশনারের সাথে বৈঠক করেছে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার পুলিশ কমিশনার নুরেআলম মিনার সাথে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ৪ দফা দাবি সংবলিত চিঠিও প্রদান করেন নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ কমিশনার নুরেআলম মিনার কার্যালয়ে রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের আহবায়ক দ্যা ইনডিপেনডেন্টের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আব্দুস সাহেদ মন্টু ও সদস্য সচিব একুশে টেলিভিশন, দৈনিক সংবাদ ও বাংলা ট্রিবিউনের বিভাগীয় প্রতিনিধি লিয়াকত আলী বাদলের নেতৃত্বে প্রায় ঘন্টাব্যাপি এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুব রহমান হাবু, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন রংপুরের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম রিপন, টিসিএ রংপুরের সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সুমন সহ রংপুরে বিদ্যমান সাংবাদিক সংগঠনুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপ-পুলিশ কমিশনার ( ডিবি) কাজী মোত্তাকী ইবনু মিনান, উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) আবুবকর সিদ্দিক, উপ-পুলিশ কমিশনার ( অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে আহবায়ক ও সদস্য সচিব দাবি দাবি সংক্রান্ত লিখিত অবহিতকরণ চিঠি তুলে দেন পুলিশ কমিশনারের হাতে।
এসময় সাংবাতিদক নেতারা পুলিশ কমিশনারকে জানান, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জেরে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ করেসপনডেন্ট সরকার মাজহারুল মান্নানের নামে সাইবার আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্বা আইনে মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলার আবেদন করেন ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জনাব জাকারিয়া আলম শিপলু। শুধু তাই নয়, ওই কাউন্সিলরের লোকজন পোস্টারিং করে ও বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কাউন্সিলর জামিনে বের হওয়ার পর তার লোকজন বিভিন্নভাবে মাজহারের ওপর ভয়ভীতি, হুমকি ধামকি প্রদর্শন করছে। মাজহারকে অনুসরণ করে বিভিন্ন স্থানে মহড়া দিচ্ছে।
সাংবাদিক নেতারা পুলিশ কমিশনারকে আরও অবহিত করেন, আরটিভির বিভাগীয় প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম বাদল সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নগরীর আমাশু কুকরুল (গলাকাটা মোড়) বাজারে ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের সামনে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের চাপাতি এবং ধারালো অস্ত্রের হামলায় গুরুতর জখম হন। ওই ঘটনার মামলায় একজন আসামীকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আসামীরা এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাদলের অফিসের সামন দিয়ে নিয়মিত মহড়া দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এরমধ্যে মামলার ২ নং আসামী জামিন নিয়ে এসে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর বাদলের নামে পরশুরাম থানায় একটি সাজানো, বানোয়াট, মিথ্যা মামলার এজহার দায়ের করেন।
এছাড়াও পুলিশ কমিশনারকে জানানো হয়, নগরীর গুড়াতিপাড়ায় স্থানীয় জমি দখলবাজদের হামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় দৈনিক যুগের আলোর ফটো সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন ইমরোজ ইমু। এ ঘটনায় মামলা হলেও প্রধান আসামী এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাকে এখনও গ্রেফতার করা হয় নি। উল্টো ইমুর বাড়ির সামন দিয়ে মহড়া দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শণ ও নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন প্রধান আসামী।
অন্যদিকে গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তার চরে ভুট্রার বাম্পার ফলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় চরদখলকারিদের হামলায় গুরুতর আহত হন এশিয়ান টেলিভিশনের বিভাগীয় প্রতিনিধি বাদশাহ ওসমানি, দৈনিক দাবানলের স্টাফ রিপোর্টার একেএম সুমন, ভিডিও সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম ও ফটো সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম। এ ঘটনার মামলায় ২ জন গ্রেফতার হলেও বাকিরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ঘটনা উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনারকে সাংবাদিক নেতারা বলেন, এসব ঘটনায় গণমাধ্যমকর্মী এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলো গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠি ও শংকিত। এসময় হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং দাখিলকৃত মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহারসহ র দায়িত্বপালনের সময় সাংবাদিকদের নিরাপত্বা নিশ্চিতের দাবি জানান সাংবাদিক নেতারা। বৈঠকে পুলিশ কমিশনার নুরেআলম মিনা সাংবাদিক নেতাদের বক্তব্য শুনেন। বলেন, প্রত্যেকটি বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি অনিরাপদবোধ করার সাথে সাথেই পুলিশকে ইনফর্ম করার আহবান জানান। তিনি বলেন, সাংবাদকিদের ওপর হামলা, মিথ্যা মামলা করে কেউ পার পাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed