মা বাবার মনোমালিন্যের বলি শিশু এ্যানি।

হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানায় পাষণ্ড স্বামী ট্রাক চালক ও হেলপারকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন স্রী।।
ট্রাক উদ্ধারসহ আসামি গ্রেফতারে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।।

আকিকুর রহমান রুমন:-

মা বাবার মনোমালিন্যের বলি হয়েছে ১৫ মাসের অসুস্থ শিশু এ্যানি।
এঘটনায় পাষণ্ড ট্রাক চালক স্বামী ইমরান আহমেদ ও হেলপার বাদলকে আসামী করে শিশু হত্যার দায়ে মামলা করেন স্রী ইয়াসমিন বেগম।
মায়ের কোলে থাকা এ্যানিকে ছিনিয়ে নিয়ে ট্রাক থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেন নিষ্টুর পাষণ্ড বাবা ইমরান আহমদ।
সিলেটের সারিঘাট এলাকার বাসিন্দা ইমরান আহমদ একজন ট্রাক চালক।
তিন বছর আগে জৈন্তাপুর উপজেলার গর্দান গ্রামের স্বামী পরিত্যক্ত ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন ইমরান।
ইয়াসমিন এর আগের স্বামীর ঘরে ৩ বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে সাফি।
এদিকে ইমরানের কাছে বিয়ে হওয়ার ৩ বছরের সংসার জীবনে তাদের ১৫ মাস বসয়ী এই শিশু কন্যা এ্যানির জন্ম হয়।
কিন্তু তাদের সংসার জীবনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দিলে প্রায় কয়েক মাস আগে ইমরান তার স্ত্রী ইয়াসমিনকে তালাক দেন।
এই বিষয়টি আবার স্থানীয় মুরব্বীদের মধ্যস্থতায় কন্যার ভরন পোষনের জন্য প্রতি মাসে ইয়াসমিনকে ২ হাজার টাকা দেয়ার জন্য বলা হয়।
সে অনুয়ায়ী ট্রাক চালক স্বামী ইমরান মাসে মাসে এই টাকা দিয়ে আসছিলেন।
ইদানিং এক মাসের টাকা দিতে দেরি হওয়ায় গত ২৯জানুয়ারি (সোমবার)ইয়াসমিন তার স্বামী ইমরানের সাথে যোগাযোগ করেন।
একই সাথে কন্যার অসুস্থতার কথা জানান।
পরে স্বামী নিজে এসে সন্তানকে চিকিৎসা করাবেন বলে জানান।
স্বামীর কথা অনুযায়ী সোমবার সিলেটের শাহপরান থানার দাসপাড়ায় এলাকায় ছেলে মেয়ে নিয়ে অবস্থান করছিলেন ইয়াসমিন।
ওই দিন রাত আনুমানিক ৯টার দিকে চিকিৎসককে দেখানোর নামে ইমরান তার স্ত্রী,সন্তান ও কন্যাকে ট্র্যাকে তুলে নেন। এসময় বাদল নামে ট্রাকে এক হেলাপারও ছিল।
ইয়াসমিন পুলিশকে জানান,ট্রাক চালানো অবস্থায় ইমরানের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়।
এক পর্যায়ে
প্রায় ৮০ কিলোমিটার গাড়ি দৌড়িয়ে গভীর রাতে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ৬নং কাগাপাশা ইউনিয়নের কাগাপাশা বাজারের পশ্চিমে একটি ব্রিজের কাছে ট্র্যাক থামান ইমরান।
এ সময় ইয়াসমিনের কোলে থাকা অসুস্থ কন্যা শিশু এ্যানিকে কেড়ে নিয়ে ট্র্যাক থেকে ব্রীজের নিচে খালে ফেলে দেন।শিশু পুত্র সাফিকেও ফেলে দেয়ার চেষ্টা করেন।
এসময় হাতে পায়ে ধরে সাফিকে রক্ষা করেন জানান ইয়াসমিন।
এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। ওই সময় তারা কোথায় অবস্থান করছিলেন তিনি তাও জানতেন না। ইয়াসমিন জানান,ভোরে সিলেটের টিলাগড় এলাকায় ইয়াসমিন ও তার পুত্রকে নামিয়ে ট্র্যাক নিয়ে চম্পট দেন ইমরান ও হেলপার বাদল।
তিনি এই ঘটনার বিষয়টি জানাতে সিলেটের শাহপরান থানায় গেলে পুলিশ তা আমলে নেয়নি।
এদিকে ৩০জানুয়ারি (মঙ্গলবার)সকালে বানিয়াচং থানা পুলিশ খবর পেয়ে এ্যানির লাশ উদ্ধার করেন।
ওই সময়ে তার পরিচয় না পাওযায় লাশটি ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরন করা হয়।
১দিন ১রাত লাশটি মর্গে থাকার পরদিন ৩১জানুয়ারি (বুধবার)ময়না তদন্ত শেষ করে পুলিশ প্রশাসন।
পরে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম এর কাছে হস্তান্তর করা হলে তারা হবিগঞ্জ কবরস্থানে শিশুটিকে দাফন করে।
অন্যদিকে অঞ্জাত শিশুর লাশ উদ্ধারের খবরটি ফেসবুক ও দৈনিক জৈন্তা বার্তা পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে বুধবার রাতে ইয়াসমিন ও তার স্বজনগন তাদের শিশুকে কোথায় ফালানো হয়েছে এসব জানতে পারেন।
পরে তারা রাতেই রওয়ানা দিয়ে ১লা ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার)রাত ৩টার দিকে বানিয়াচং থানায় আসেন।
তারপর বৃহস্পতিবার সকালে কাগাপাশা ইউনিয়ন এর স্হানীয় চেয়ারম্যান এরশাদ আলীর উপস্থিত থেকে এ্যানির মা ইয়াসমিন ও তার স্বজনদেরকে সহযোগীতা করেন।
এবং এই ঘটনার বর্নণা দিয়ে বানিয়াচং থানায় ঘাতক ট্রাক চালক পাষণ্ড স্বামী ইমরান আহমেদ ও হেলপার বাদলকে আসামি করে শিশু হত্যার ঘটনায় একটি হত্যা মামলার এজাহার লেখান সন্ধ্যার দিকে থানার এসআই (সেকেন্ড অফিসার) অমিতাভ এর দ্ধারাতে।
এব্যাপারে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,
এ ঘটনায় ইয়াসমিন বাদি হয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
কিছুক্ষণের ভিতরেই মামলাটি রেকর্ড করা হয়ে যাবে।
এছাড়াও এই ঘটনার সময় ব্যবহৃত ট্রাকটি উদ্ধার ও ঘাতক ইমরানসহ হেলপার বাদলকে গ্রেফতারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

আকিকুর রহমান রুমন।
মোবাইল নাম্বার:-
০১৭১৭-২৮২৮৭১
১লা ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ২০২৪ইং।
বানিয়াচং হবিগঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed