ঈদের আগেই গণপরিবহন চালুর চিন্তা করছে সরকার
চলমান ‘লকডাউনের পর’ জনস্বার্থ বিবেচনায় ঈদকে সামনে রেখে সরকার গণপরিবহন চালুর চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আন্দোলন, বিক্ষোভে না গিয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি। শনিবার ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবনে ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকার ৫ থেকে ১১ এপ্রিল একগুচ্ছ বিধিনিষেধের আওতায় লকডাউন দেয়। এরপর এর মেয়াদ ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
পরে বিধিনিষেধ আরো কঠোর করে ১৪ এপ্রিল থেকে জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, যা সর্বাত্মক লকডাউন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল করা হয়। এ সময় গণপরিবহনও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালুর দাবিতে রোববার সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
সংগঠনটির ভাষ্য, করোনাভাইরাসের মহামারিতে সবকিছু চালু থাকলেও গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে ৫০ শতাংশ পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। গণপরিবহন চালুর দাবি বাস্তবায়নে রোববার বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি আগামী মঙ্গলবার (৪ মে) সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও ঘোষণা দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলন, বিক্ষোভে না গিয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
সরকার ঈদ ও রমজানের কথা বিবেচনা করে এবং শ্রমজীবী মানুষ যারা দোকানপাট, শপিংমলে কাজ করেন তাদের কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যেই লকডাউন শিথিল করা হয়েছে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
আজ পহেলা মে। বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস তথা মে দিবস। এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, শ্রমিকদের লড়াই, সংহতি, দৃঢ়তা ও রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা অর্জিত বিজয় দিবসই মে দিবস।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগেই বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ২২ জুন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, একই দিনে বাংলাদেশ আইএলও এর ২৯টি কনভেনশন অনুসমর্থন করে যা ছিলো একটি বিরল ঘটনা।
শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু সরকার প্রথম শ্রমনীতি ঘোষণা করেন, যেখানে মালিক শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়ন, শিল্পের শান্তি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ সুরক্ষা এবং কল্যাণের প্রতি জোর দেওয়া হয় বলে জানান মন্ত্রী।
জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত ও মেহনতী মানুষের অধিকার রক্ষায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা সরকার শ্রমিকবান্ধব সরকার, শেখ হাসিনা সরকারের চেষ্টায় শিশুশ্রম নিষিদ্ধ ও শ্রম আইন বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি এবং কৃষি-শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেছে সরকার।
ঈদের আগেই বিভিন্ন কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতিও অনুরোধ জানান তিনি। বিএনপি করোনা নিয়ে যতই অপপ্রচার করুক তাতে জনগণ বিশ্বাস করে না এবং সাড়া দেয় না জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার মানবিক নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আস্থা অবিচল আর জনগণের প্রতি সুদৃঢ় কমিটমেন্ট থেকেই সরকার সংক্রমণ রোধ ও চিকিৎসায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
করোনাকে পুঁজি করে যারা অপপ্রচারের বাণিজ্য করছে তারাই প্রকারান্তরে নানা অনিয়মের প্রশ্রয় দাতা বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি একদিকে অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে অপরদিকে অনিয়ম, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলে বলে বিরোধীদলকে দমন করছে।